মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা, উখিয়া
প্রকাশিত: ০৬/১০/২০২৩ ৩:২৭ পিএম

সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে উখিয়ায় অবৈধ স’মিল ব্যবসা রমরমা৷ চিরাই হচ্ছে শতশত একর সামাজিক বনায়নের টনটন গাছ। এরমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ টি অবৈধ সমিল রয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নে ৫ টি, রত্না পালং ইউনিয়ন ৪ টি, জালিয়াপালং ইউনিয়নে ৩ টি, হলদিয়াপালং ইউনিয়নে ২ টি ও পালংখালী ইউনিয়নের ৬ টির মত সমিল বসানো হয়েছে।

সূত্র মতে, সমিল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স প্রাপ্তির পর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। সমিল লাইসেন্স বিধিমালা ২০১২-এর আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, করাতকল স্থাপন বা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স ফি বাবদ ২ হাজার টাকা ‘১/৪৫৩১/০০০০/২৬৮১ (বিবিধ রাজস্ব ও প্রাপ্তি)’ খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা যেকোনো সরকারি ট্রেজারিতে জমাপূর্বক তার ট্রেজারি চালান আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত না করলে আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না।

সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে সমিল স্থাপন করা যাবে না। বিধিমালায় আরো বলা আছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে কোনো নিষিদ্ধ স্থানে সমিল স্থাপন করা হয়ে থাকলে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। যদি তা না করা হয় তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই।

উখিয়ার কয়েকজন গ্রামবাসীর ভাষ্য মতে কিছুকিছু এলাকার স’মিলে ১০ বছর ধরে উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। বনবিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্থাপিত স-মিলে চোরাই গাছ চিরাই ও পাচারের ডিপুতে পরিণত হয়েছে এগুলো।

পরিবেশবাদী সংগঠন গুলোর মতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা এই স-মিলের কারণে সামাজিক বনায়ন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শুধু তাই নই পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সরকার এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে লাইসেন্স বিহীন স-মিল গুলো উচ্ছেদ করা এতদ অঞ্চলের মানুষের এখন সময়ের দাবি।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ সব স-মিলের বৈধ কাগজপত্র কিংবা কোন প্রকার লাইসেন্স নেই। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে এসব সমিল বসানো হয়েছে এবং চলে আসছে। চিরাই করছে শতশত বনবিভাগের গাছ৷ এসব চিরাইকরা কাঠ ডাম্পার ও জীপ যোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করা হয়।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উখিয়া বনবিভাগের কতিপয় বনকর্মী প্রতিটি সমিল থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক মাসোহারা আদায় করে থাকে।

বুধবার ৪ অক্টোবর বিকেলে উখিয়া বনবিভাগ ও উপজেলা প্রসাশনের যৌথ অভিযানে ২টি স’মিল উচ্ছেদ করেছে।

গত তিনমাসে তিনমাসে স’মিল উচ্ছেদ ৮টি, ১৫ একর বনবিভাগের জায়গায় উদ্ধার ও সিআর মামলা ১০, ড্রেজার মিসিং উদ্ধার ৫টি। এসব অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করিয়ে আবার চালিয়ে যায় অবৈধ স’মিল, বালু উত্তলন, জবরদখল।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম জানান, অবৈধ স’মিল স্থাপন করে বনের কাঠ চিরাই কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে তথ্য উপাত্ত নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব জানান, উখিয়া উপজেলায় স’মিল উচ্ছেদের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। রাজাপালং এলাকায় দুটি সমিল উচ্ছেদ সহ মামলা দায়ের করা হয়েছে। পর্যায় ক্রমে সব অবৈধ সমিল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাছাড়া উপজেলার অবৈধ দখলদার, বালু উত্তলন কারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা সমস্যা কক্সবাজারের উন্নয়নে বাধা: সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী

কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কক্সবাজার ...